পুরুষের প্রতি যৌন সহিংসতা বন্ধ করার লক্ষ্যে মানববন্ধন করেছে এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন
ঢাকা ০৮ ডিসেম্বর:
পুরুষের প্রতি যৌন সহিংসতা বন্ধ করার লক্ষ্যে, পুরুষের লিঙ্গ-কর্তন বা অন্য কোন উপায়ে পুরুষত্বহীন করার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক খান, উপস্থিত ছিলেন এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাদিম, তাহমিনুর রহমান সজীব সহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরা।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি বলেন বলেন, “পুরুষের প্রতি যৌন সহিংসতা হিসেবে লিঙ্গ-কর্তনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। কখনো স্ত্রীর দ্বারা বা কখনো অন্য দুর্বৃত্তদের দ্বারা পুরুষাঙ্গ-কর্তনের মত নৃশংস অপরাধের শিকার হচ্ছে পুরুষ। এই অপরাধের ফলে যৌন জীবন ও পিতৃত্বের ক্ষমতা আজীবনের মত হারিয়ে ফেলছে পুরুষ। অনেক সময় এই গুরুতর জখমের ফলে মৃত্যুবরণও করছে। অথচ অপরাধের মাত্রা ও ভিক্টিম পুরুষের ক্ষতির তুলনায় লিঙ্গ-কর্তনের অপরাধীদের অনেক লঘু শাস্তি হচ্ছে। আমরা লিঙ্গ-কর্তনের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডের বিধানের দাবি জানাচ্ছি।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের আইন বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী এডভোকেট কাউসার হোসাইন বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যমান দন্ডবিধি-১৮৬০ এর ১৬ নং অধ্যায়ে মানবদেহ সংক্রান্ত অপরাধ বিষয়ে উল্লেখ করা আছে।উক্ত অধ্যায়ে পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা নামে সুনিদির্ষ্ট কোন অপরাধ আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করা নেই।তবে উক্ত অধ্যায়ের ৩২০ ধারায় গুরুতর আঘাতের সংজ্ঞা দেয়া আছে যার মধ্যে পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা অপরাধটি অন্তভুর্ক্ত করা যায়।৩২০ ধারায় উল্লেখিত গুরুতর আঘাতের সংজ্ঞা বিশ্লেষন করলে পাওয়া যে,আট শ্রেনীর আঘাতকে গুরুতর আঘাত হিসেবে গন্য হবে।উক্ত আট শ্রেনীর আঘাত হলো- ১)পুরুষত্বহীন করা, ২)স্থায়ীভাবে দুই চোখের যেকোনটিতে দৃষ্টিশক্তি রহিতকরন, ৩)স্থায়ীভাবে দুই কানের যেকোনটিতে শ্রবনশক্তি রহিতকরন, ৪) যেকোন অঙ্গ বা গ্রন্থির অনিষ্ঠ সাধন, ৫)যেকোন অঙ্গ বা গ্রন্থির কর্মশক্তিসমূহের বিনাশ বা স্থায়ী ক্ষতি সাধন, ৬) মস্তক বা মুখমন্ডলের স্থায়ী বিকৃতি, ৭)হাড় বা দন্ত ভঙ্গ বা গ্রন্থিচ্যুতিকরন, ৮)যে আঘাত জীবন বিপন্ন করে বা আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বিশদিন মেয়াদের জন্য তীব্র দৈহিল যন্ত্রনা দান করে বা তাকে তার সাধারন পেশা অনুসরন করতে অসমর্থ করে। উক্ত আট শ্রেনীর আঘাতের মধ্যে ১,৪ ও ৫নং শ্রেনীর আঘাতের সবগুলো বা যেকোন একশ্রেনীর আঘাত পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলাকে অন্তর্ভুক্ত করে বিধায় দন্ডবিধির ৩২০ ধারার সংজ্ঞা অনুযায়ী পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলার অপরাধ একটি মারাত্মক আঘাতের অপরাধ।উক্ত মারাত্মক আঘাতের শাস্তি ৩২৫ ও ৩২৬ ধারায় দেয়া আছে। ৩২৫ ধারা প্রযোজ্য হবে যদি মারাত্মক আঘাতের জন্য কোন অস্ত্র ব্যবহার না করা হয় বা সাধারন(ভোতা) অস্ত্র ব্যবহার করা হয়,উক্ত ধারা অনুযায়ী অপরাধীর শাস্তি ৭ বৎসর কারাদন্ড এবং জরিমানা হতে পারে। অন্যদিকে ৩২৬ ধারা প্রযোজ্য হবে যদি মারাত্মক আঘাত সংঘটনের জন্য মারাত্মক বা বিপদজনক অস্ত্র বা মাধ্যম ব্যবহার করা হয়। উক্ত ধারা অনুযায়ী অপরাধীর শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা যেকোন বর্ননার কারাদন্ড যা দশ বছর পর্যন্ত হতে পারে এবং জরিমানা হতে পারে।উক্ত বিশ্লেষন থেকে এটি স্পষ্ট যে মারাত্মক অস্ত্র বা মাধ্যম ব্যবহার করে পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা (মারাত্মক আঘাত) এর অপরাধ করা হলে তার শাস্তি হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা যেকোন বর্ননার কারাদন্ড যা দশবছর পর্যন্ত হতে পারে এবং জরিমানা।কিন্তু বর্তমানে বিদ্যমান শাস্তি বলবৎ থাকার পরেও এই অপরাধটি সংঘটিত হওয়ার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এবং এটি একটি নিষ্ঠুরতম অমানবিক অপরাধ যা একজন পুরুষকে জীবিত অবস্থায় মৃতের মত করে বাঁচিয়ে রেখে অসহনীয় মানসিক হতাশা ও যন্ত্রনা দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় এবং সমাজে এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়ে বিধায় এই অপরাধটিকে আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করে শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে অপরাধীদের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করলে এজাতীয় অপরাধ কমবে এবং ভিকটিম ন্যায় বিচার পাবে বলে আমি মনে করি।
এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের -এর সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাদিম বলেন, “পুরুষাঙ্গ-কর্তনকে ধর্ষণতুল্য অপরাধ বা ধর্ষণের চেয়েও গুরুতর অপরাধ ও যৌন সহিংসতা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। কারণ একজন ধর্ষনের শিকার নারী চাইলে পুনরায় বিয়ে করতে পারেন, সন্তান জন্ম দিতে পারেন,ও যৌন জীবনে সক্রিয় থাকতে পারেন । কিন্তু লিঙ্গ-কর্তনের শিকার একজন পুরুষ জীবনে আর বিয়ে করতে পারেন না, যৌন জীবনে সক্রিয় থাকতে পারেন না, সন্তান জন্ম দিতে পারেন না। মৃত্যু ঝুঁকি এড়িয়ে বেঁচে গেলেও লিঙ্গ-কর্তনের শিকার পুরুষকে আজীবন অপূরণীয় ক্ষতি নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়, যা খুবই অমানবিক।
সুতরাং ধর্ষণের চেয়ে লিঙ্গ-কর্তন ও পুরুষত্বহানি কোনও অংশেই কম গুরুতর অপরাধ নয়। তাই ধর্ষণের শাস্তি যেমন মৃত্যুদন্ড, তেমনই পুরুষাঙ্গ-কর্তনের শাস্তি হিসেবেও মৃত্যুদন্ডের বিধান থাকা আবশ্যক।”