করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কর্মহীন মানুষকে সহায়তা দিতে সরকারের ১০ টাকা দরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) চাল চুরির প্রতিবেদন করায় যুবলীগ নেতার হুমকি-ধমকিতে সস্ত্রীক পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এক সাংবাদিক। ভুক্তভোগী সাংবাদিক মো. নাসিম উদ্দিন বেসরকারি টেলিভিশন আনন্দ টিভির জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রতিনিধি।
ভুক্তভোগী সাংবাদিকের অভিযোগ, আনন্দ টিভিতে গত বৃহস্পতিবার তিনি ১০ টাকা দরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল চুরির একটি প্রতিবেদন করেন। এতে ক্ষেপে গিয়ে শুক্রবার রাতে সরিষাবাড়ী পৌর যুবলীগের সদস্য মো. সাখাওয়াত ইসলাম মুকুলের নেতৃত্বে কয়েকজন তাকে সরিষাবাড়ী থানায় তুলে নিয়ে যান। সেখানে আটকে সরিষাবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) উপস্থিতিতে জোর করে মুচলেকা লিখে দিতে বাধ্য করা হয় তাকে।
এই বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ওই সাংবাদিককে প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয়। সোমবার দুপুরেও মুঠোফোনে একই বিষয়ে হুমকি পান তিনি। লাগাতার হুমকি-ধমকির কারণে বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন নাসিম উদ্দিন ও তার পরিবার। এসব বিষয়ে আজ সোমবার ইমেইলের মাধ্যমে পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন তিনি।
সাংবাদিক নাসিম উদ্দিন জানান, সরিষাবাড়ীর ইউএনও শিহাব উদ্দিন আহমদ এবং ওসি মাজেদুর রহমানের সামনেই প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে অকথ্য ভাষায় তাকে গালাগাল করেন ওই যুবলীগ নেতা। এরপর বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে একটি কাগজে মুচলেকা লিখতে বাধ্য করা হয়। কাগজে লিখতে বলা হয়- আমি মো. নাসিম উদ্দিন, আনন্দ টিভি সরিষাবাড়ী প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত, আমি ছাত্রদলের একজন সক্রিয় কর্মী এবং দেশ বিরোধী কাজে লিপ্ত। আমি গত ৯ এপ্রিল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ১০ টাকা কেজি দরের চালের কম দেয়া নিয়ে যে নিউজ করেছি তা সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে হাছিলের জন্য করেছি, এর জন্য আগামীকাল আমার টিভিতে প্রতিবাদ দেবো।
ওই সাংবাদিকের অভিযোগ, মুচলেকা গ্রহণের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, তোমরা (সাংবাদিক) আমাদের কাছে কিছুই না। সাংবাদিকদের উদ্দেশে কটাক্ক করে এ ধরনের আরও বাজে মন্তব্য ও গালমন্দ করেন।
সাংবাদিকতা ছেড়ে দিতে হবে এই শর্তসহ এই নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে থানা থেকে নাসিমকে ছেড়ে দেয়া হয়। আজ সোমবার দুপুরেও নাসিমের খোঁজে তার বাসায় যান হুমকিদাতারা। না পেয়ে দুপুর ১২টা ৮ মিনিটে নাসিমকে ফোন করে নানা ধরনের হুমকি দেয়া হয়।
থানায় তাকে ছাত্রদলের কর্মীর ট্যাগ লাগানো মুচলেকা দিতে বাধ্য করা হলেও নাসিম উদ্দিনের পুরো পরিবারই আওয়ামী লীগপন্থী। তার বাবা দৌলতউজ্জামান দুদু দীর্ঘদিন সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর ৮ নম্বর চরগিরিশ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন বলে দাবি করেন নাসিম।
আজ আইজিপির মেইলেও এসব অভিযোগ লিখে নাসিম বলেন, বাংলাদেশের এই দুর্যোগের সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার মানুষকে যখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঘরে থাকার কথা বলা হচ্ছে, তখন প্রাণ বাঁচাতে আমি সস্ত্রীক পালিয়ে বেড়াচ্ছি; প্রাণশঙ্কায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং চরম মানবেতর জীবন যাপন করছি। ঘটনার তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইজিপির কাছে নাসিম অনুরোধ জানান।
সাংবাদিক নাসিমকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে থানায় আটকে মুচলেকা নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে সরিষাবাড়ী পৌর যুবলীগের সদস্য সাখাওয়াতুল ইসলাম মুকুল বলেন, এ ধরনের ঘটনার বিষয়ে আমি অবগত নই। আমি সবসময় সাংবাদিক ভাইদের পাশেই আছি। করোনা পরিস্থিতিতে তারা যেন ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পারেন সেই লক্ষ্যে সোমবার জামালপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিক ভাইদের পিপিই সরবরাহ করেছি।
অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে সরিষাবাড়ী থানার ওসি মাজেদুর রহমানও জানান, এই ঘটনার বিষয়ে অবগত নন তিনি।
অভিন্ন মন্ত্যব্য করে সরিষাবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিহাব উদ্দিন আহমদ বলেন, গত শুক্রবার রাতে অন্য একটি প্রয়োজনে সরিষাবাড়ী থানায় গিয়েছিলাম। সেখানে আনন্দ টিভির সাংবাদিক নাসিম উদ্দিনকে আমি দেখেছি। কিন্তু তিনি যে অভিযোগ তুলছেন এই বিষয়ে তার সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি।